বাংলাদেশে ফার্নিচার ডিজাইনের সাম্প্রতিক প্রবণতা

আধুনিক জীবনযাত্রার সাথে তাল মিলিয়ে মানুষের স্বাদ ও পছন্দে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। ফার্নিচার ডিজাইনের ক্ষেত্রেও যুক্ত হয়েছে নতুন ধারণা ও নকশা। প্রাকৃতিক কাঠের সাধারণ আসবাবপত্রের বদলে এখন মডার্ন, মিনিমালিস্ট এবং মাল্টিফাংশনাল ফার্নিচারের চাহিদা বেড়েছে। ফার্নিচারের ডিজাইনের এই প্রবণতা কিভাবে জনপ্রিয়তা পেলো এবং এসব ডিজাইনের সুবিধাসমূহ কি তা নিয়েই আজকের পোস্টে কথা বলবো।

বাংলাদেশে ফার্নিচার ডিজাইনের সাম্প্রতিক প্রবণতা

বর্তমানে বাংলাদেশের ফার্নিচারের চাহিদা কেমন?

অন্যান্য দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত শ্রেণীর আয় বৃদ্ধির সাথে সাথে ফার্নিচারের চাহিদাও বেড়েছে। মানে, মানুষ এখন আর কেবল ব্যবহারিকতার দিকেই নয়, আসবাবপত্রের সৌন্দর্য ও ডিজাইনের দিকেও খুব বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।

তাই নতুন বাড়ি তৈরি বা পুরানো বাড়ি রেনোভেট করার সময় আধুনিক ডিজাইনের ফার্নিচারের চাহিদা বেড়েছে। রিসার্চাররা ধারণা করছে ২০২৩ থেকে ২০৩০ এর মধ্যে বৈশ্বিক ৬৭৭ বিলিয়ন ডলারের ফার্নিচার মার্কেট ৫.৯% চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়বে। 

নিত্যনতুন ফার্নিচারের ডিজাইন কেন এত জনপ্রিয়তা পেয়েছে?

চিরাচরিত ফার্নিচারের ডিজাইন এখন আর সময়োপযোগী না। যেমনঃ হাতিল -এর মত ফার্নিচার ব্র‌্যান্ডের আউটলেট ভিজিট করলে দেখবেন আধুনিক খাটের ডিজাইন থেকে শুরু করে সোফা, টেবিল, চেয়ার, শেলফ, ওয়ারড্রোব, র‌্যাক, কিচেন কেবিনেট ইত্যাদি সবকিছুই নতুনভাবে থ্রিডি মডেলিং করা হয়েছে। এর কারণ নতুন ডিজাইন একইসাথে বেশি মানানসই, সুন্দর ও আরামদায়ক হয়।

  • নতুন ডিজাইনের ফার্নিচারগুলি আধুনিক জীবনযাত্রার সাথে সম্পূর্ণ মানানসই হয়। ঘরের মধ্যে কম জায়গা নেবার ফলে এগুলো সহজে সরানো যায় এবং রুমকে বেশ বড় মনে হয়। এতে ব্যবহারকারীর রুচিও বেশ ভাল করে ফুটে ওঠে।

  • নতুন ডিজাইন দেখতে সুন্দর এবং আকর্ষণীয় হয়। এগুলোর কালার কম্বিনেশন এতটা নিখুত যে সাধারণ একটা রুমকে অল্প কিছু ফার্নিচার দিয়ে সম্পূর্ণ রুমের চেহারাই পাল্টে দেওয়া যায়। অনেক ফার্নিচার সেট আকারে কিনতে পাওয়া যায়।

  • আধুনিক ফার্নিচারগুলি সবসময় আরামদায়ক হয়। নির্মাতারা এধরণের ফার্নিচারে ফোম ও কুশনের ব্যবহার বেশি করে। তাই দীর্ঘ সময় বসে বা শুয়ে থাকলেও কোনো প্রকার অস্বস্তি আসেনা। আর ফার্নিচারের উপরে ইকো ফ্রেন্ডলি টেম্পার্ড গ্লাস, স্টেইনলেস স্টীল আর ইঞ্জিনিয়ার্ড কাঠের পলিশিং খুবই মোলায়েম হয়ে থাকে।

  • অনেক আধুনিক ফার্নিচারে টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়। যেমন, চার্জিং স্টেশন, LED লাইট ইত্যাদি। আবার অনেক ফার্নিচারে মেটাল, উড ও গ্লাস একসাথে ব্যাবহার করা হয়। একারণে ফার্নিচারগুলো বর্ণিল ও ব্যবহার বান্ধব হয়ে থাকে।

শুধু তাই নয়, নিত্যনতুন ফার্নিচারগুলি ছবি-ভিডিওতে দেখতেও বেশ সুন্দর লাগে। তাই বিভিন্ন নাটক, সিনেমা, সিরিজে দেখবেন এ ধরনের ফার্নিচার সহ রুম দেখানো হয়। এতে যেকোনো ক্রিয়েটিভ কাজের ভ্যালু বাড়ে, আবার দর্শকও দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য দেখতে পারে।

আধুনিক ডিজাইনের ফার্নিচার ব্যবহারের সুবিধাসমূহ কি কি?

আধুনিক ফার্নিচারের ডিজাইনে স্পেস সেভিং, ওয়ারেন্টি, ক্লিনিংসহ অসংখ্য সুবিধা পাবেন। সবচেয়ে বড় বিষয় মাল্টিপারপাজ সিস্টেম হবার কারণে সব ফার্নিচার না কিনেও সবরকম ফার্নিচারের উপযোগীতা পাবেন। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুবিধার তালিকা দেওয়া হলো—

কম স্পেসে অনেক ফার্নিচার রাখা যায়

আধুনিক ফার্নিচারগুলি সাধারণত কম জায়গা নেয়। যেমনঃ সোফা বেড, সেন্টার টেবিল, ফোল্ডিং টেবিল, ক্যাবিনেট বেড ইত্যাদি মডুলার ডিজাইনের হয়। পুরনো ফার্নিচারের মত অতিরিক্ত কাঠের অংশ না থাকার ফলে হাঁটাচলা করার সময় ফার্নিচারের সাথে ধাক্কা লাগে না।

একই ফার্নিচারের বহুমুখী ব্যবহার করা যায়

অনেক আধুনিক ফার্নিচার একাধিক কাজে ব্যবহার করা যায়। যেমনঃ একটি আধুনিক টেবিলকে কখনো কফি টেবিল, কখনো ডাইনিং টেবিল হিসেবে ব্যবহার করা যায়। আবার একটা সোফাকে গেস্ট রুমে সোফা আর বেড রুমে বেড হিসেবে ইউজ করা যায়। এরকম ডিভান, চেয়ার, বার কেবিনেট সহ সবকিছুই মাল্টিপারপাজে ব্যবহার করা খুব সহজ।

সহজে পরিষ্কার করা যায়

আধুনিক ফার্নিচারগুলি সাধারণত পরিষ্কার করা সহজ হয়। এগুলোতে অনেক মোলায়েম বার্নিশ দেওয়া থাকে। তাই ধুলো ময়লা কম জমা হয়। পরিষ্কার করতে হলে ভিজে কাপড় বা স্পিরিট দিয়ে সহজেই মুছে নেওয়া যায়। চাইলে ফার্নিচারের বিভিন্ন অংশ খুলে ভিতরের অংশও পরিষ্কার করতে পারবেন।

ওয়ারেন্টি ও স্থায়ীত্ব বেশি হয়

আন্তর্জাতিক মানের ফ্যাক্টরিতে ভাল মানের উপাদান দিয়ে সকল আধুনিক ফার্নিচার তৈরি হয়। তাই কোনোরকম ম্যানফ্যিাকচারিং ডিফেক্টের জন্য প্রস্তুতকারক কোম্পানি ওয়ারেন্টি দিয়ে থাকে। ক্লীন ড্রাইড বীচ উডের মত শক্তপোক্ত কাঠ থাকার কারণে ফার্নিচারগুলো টেকে বেশিদিন। এগুলো কখনো পঁচে যাবার ভয় নেই। পানি থেকে দূরে রাখলে বছরের পর বছর একই ভাবে থাকবে।

বাংলাদেশে কোন ধরনের ফার্নিচারে বেশি আধুনিক ডিজাইন করা হয়?

সাত ধরনের ফার্নিচারে বেশি আধুনিক ডিজাইন লক্ষ করা যায়। কারণ আমরা এগুলো দৈনন্দিন কাজে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করি। এগুলো হচ্ছে, লিভিং রুম, বেডরুম, ডাইনিং, কিচেন, ডোরওয়ে, অফিস রুম ও ইনস্টিটিউট রুমের ফার্নিচার। চলুন দেখে নেওয়া যাক এই লিস্টে কি কি ফার্নিচার থাকতে পারে—

১. লিভিং রুম ফার্নিচারঃ রুমে সোফা, সেন্টার টেবিল, ডিবান, শু র‌্যাক, ক্রেডল, শু র‌্যাক, স্ট্যান্ড, টিভি কেবিনেট, ওপেন শেলফ, চেয়ার, লবি ফার্নিচার ইত্যাদি।

২. বেডরুম ফার্নিচারঃ বেড, ওয়ারড্রব, চেস্ট অব ড্রয়ারস, ড্রেসিং টেবিল, বেডসাইড টেবিল, আলমিরা, রিডিং টেবিল, ম্যাট্রেস ইত্যাদি।

৩. ডাইনিং রুম ফার্নিচারঃ ডাইনিং টেবিল, চেয়ার সেট, ওয়াগন, ক্যাফেটেরিয়া, শোকেস, মিনি কেবিনেট, টি ট্রলি ইত্যাদি।

৪. কিচেন রুম ফার্নিচারঃ মডুলার কেবিনেট, সিলিং ইত্যাদি।

৫. ডোর অ্যান্ড উইন্ডোঃ উডেন ডোর, গ্লাস ডোর, ফ্লাস ডোর, ইত্যাদি।

৬. অফিস রুম ফার্নিচারঃ কম্পিউটার টেবিল, এক্সিকিউটিভ টেবিল, স্টুলস, রিসেপশনিস্ট টেবিল, ওয়ার্কস্টেশন চেয়ার ইত্যাদি।

৭. ইনস্টিটিউশনাল ও রেস্টুরেন্ট ফার্নিচারঃ ক্যাফে, হসপিটাল, অ্যাকাডেমী, অডিটোরিয়াম ইত্যাদি জায়গাতে ব্যবহৃত ফার্নিচার।

পরিশেষ

বাংলাদেশে ফার্নিচার ডিজাইনের ক্ষেত্রে নতুন নতুন ধারণা ও নকশা আসছে। মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নতির সাথে সাথে ফার্নিচারের চাহিদাও বাড়ছে। আধুনিক ফার্নিচারগুলি শুধু ব্যবহারিক নয়, এগুলি বাড়ির সৌন্দর্যও বাড়ায়। এছাড়া হাতিল, নাভানা, আখতার, ব্রাদারস এর মত বড় বড় ফার্নিচার নির্মাতা কোম্পানির বিক্রি বৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশের ফার্নিচার শিল্পের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল বলেই মনে হয়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

লার্নিং পয়েন্ট ২৪ নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url